Wednesday, June 17, 2020

প্রেয়সী পর্ব-০১

গল্প: প্রেয়সী



পর্বঃ ০১

লিখায়: সালমান চৌধুরী সুপ্রিয়।


বিকেল বেলায় ছাদে বসে গিটার নিয়ে গান করা যেন আমার নিত্যদিনের অভ্যাস। কোনো প্রয়োজন ছাড়া তেমন ঘর থেকে বের হওয়া পড়ে না। অবসর সময়ে গান আর গোয়েন্দা গল্পের বই পড়েই কাটাই। আর আজকেও সেই নিত্যদিনের মত বিকেলবেলা ছাদে বসে গিটার হাতে নিয়ে গান গাচ্ছিলাম। হঠাৎ পাড়ায় একটা ঠেলাগাড়িকে ঢুকতে দেখলাম। ঠেলাগাড়িটা এসে আমার বাসার গেইটের সামনে থামল। আমি গান গাওয়া ছেড়ে ঠেলাগাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, ঠেলাগাড়ির উপরে কিছু আসবাবপত্র রাখা। একটু পর একটা ট্রাক এসে ঢুকল। ট্রাকটিও মালপত্র দিয়ে বোঝাই করা। দেখলাম ট্রাকটা থেকে কয়েকজন লোক নেমে মালপত্র গুলা আমার পাশের বাসায় নিয়ে যাচ্ছে।
বাসাটি প্রায় ৫/৬ মাস হবে খালি পড়ে আছে। বাসার মালিক স্বপরিবারে বিদেশে থাকেন। তাই সহজেই বোঝতে পারলাম, বাসাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। ট্রাক ও ঠেলাগাড়ি থেকে মাল নামানোর একটু পরে একটা গাড়ি এসে বাসার সামনে থামল। গাড়ি থেকে তিনজন লোক বের হল। একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ আরেকজন চল্লিশ উর্দ্ধো মহিলা এবং তাদের সাথে একজন ২০ কিংবা ২২ বছরের তরুনী। ওদেরকে পাশের বাসায় ঢুকতে দেখে বোঝলাম, এরাই বাসাটির নতুন ভাড়াটে। এভাবে হঠাৎ সন্ধ্যা হয়ে আসল। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বসলাম। তারপর একটা গোয়েন্দা গল্পের বই হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলাম। ছোটবেলা থেকেই প্রবল ইচ্ছা একদিন বড় গোয়েন্দা হব। কিন্তু তেমন সুযোগ সুবিধা কখনো হয়ে উঠে নি। একটু পর আমার প্রেয়সীর ফোন আসল। তার সাথে প্রায় অনেকক্ষন কথা বলার পর আম্মু এসে রাতের খাবারের জন্য ডাক দিলেন। আমি প্রেয়সীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে খাবার টেবিলে যাই। খাবার টেবিলে গিয়ে খেতে বসার পর আম্মু জানালেন,"মাংসের তরকারিটা আমাদের নতুন প্রতিবেশীর মেয়ে দিয়ে গিয়েছে। মেয়েটা নাকি নিজ হাতে রান্না করেছে। ভালোই রান্না জানে তাহলে।"
আমি আম্মুর কথার কোনো উত্তর না দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। "নাহ মেয়েটা দেখছি ভালোই রান্না করে", মনে মনে বললাম। কিন্তু আম্মুকে বোঝতে দেওয়া যাবে না, তা না হলে আবার উনি আমার বিয়ের কথা বলে মাথা খারাপ করে দিবেন। এই কয়েকদিন ধরেই আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্যে আম্মু আর আব্বু নাছোড়বান্দা হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আমার মত বেকার ছেলেকে কেই বা মেয়ে দিতে চায়? আবার আমার প্রেয়সীও বলে দিয়েছে, চাকরি না পেলে নাকি আমাকে বিয়ে করবে না।
তাই আমি কোনো কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে সেখান থেকে উঠে চলে আসি। এসেই বিছানায় শুয়ে ঘুমিয়ে যাই।
পরেরদিন সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হই। অন্যদিন আম্মু এসে নাস্তা করার জন্য ডেকে দেন। কিন্তু আজকে না ডাকায় ভাবলাম কোনো কাজে হয়ত ব্যস্ত। তাই আম্মুকে খোজঁতে গিয়ে দেখতে পাই উনি ড্রয়িং রুমে বসা, সাথে একটা মেয়ে। দুইজনের হাতেই চা এর কাপ। মেয়েটা বেশ সুন্দরী। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা,কালো লম্বা চুল, গোলাপি ঠোটঁ আর চোখে কালো কাজল দেওয়া। মেয়েটার দিকে তাকানোর পর আমার চোখ যেন সরাতেই পারছিলাম না। হঠাৎ আম্মু পিছনে তাকিয়ে দেখেন আমি মেয়েটার দিকে হা করে তাকিয়ে আছি। "কি রে এভাবে কি দেখছিস?" আম্মু হেসে আমায় জিজ্ঞাসা করলেন। আম্মুর কথায় আমার যেন ঘোর কাটল। আমি লজ্জা পেয়ে কথা ঘোরাতে বললাম,"না আসলে আমি চা খেতে চাচ্ছিলাম, এক কাপ চা বানিয়ে দিবে?"
"তুই নিজে বানিয়ে নে না, যা রান্নাঘরে সব রাখা আছে।" একথা বলেই আম্মু মেয়েটার আবারো সাথে গল্পে মনোযোগ দিলেন। কিন্তু আমি এতটা অবাক কখনোই হই নি। কারন আজ পর্যন্ত আম্মু আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করান নি। এমনকি এক কাপ চা বানিয়ে খেতেও বলেন নি। আমার যখন যা দরকার সব কাজ আম্মুই করে দিয়েছেন। আজ নিজের মার মুখে এমন কথা শুনে আমি অবাক না হয়ে পারছিলাম না।
আমি সেখান থেকে চুপচাপ কোনো কথা না বলে প্রস্থান করি। আমার রুমে এসে প্রেয়সীকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,"কেমন আছ?"
- এইতো ভালো, তুমি?
- তোমার সাথে কথা হলে ভালো না হয়ে থাকতে পারি?
- হ্যাঁ আসছে উনি আহ্লাদ দেখাতে। তা তুমি চাকরির ব্যাপারে কিছু ভেবেছ?
- নাহ এখনো তেমনভাবে ভাবা হয় নি।
- মানে? তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাও না? দেখো বাবা কিন্তু বিয়ের জন্য প্রেসার দিচ্ছে। আর তুমি এখন পর্যন্ত তোমার পরিবারকেও কিছু বলো নি। এভাবে হলে একদিন দেখবা আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
আমি প্রেয়সীর বিয়ের কথা শুনে চুপ হয়ে যাই। অনেকক্ষন আমাদের মাঝে কোনো কথা হয় নি। তারপর প্রেয়সীই আবার কথা বলল
- কি রে নবাব কিছু বলছ না কেন?
- তুমি ভালো করেই জান আমি তোমার বিয়ে হতে দিব না।
- কিভাবে হতে দিবে না? এভাবে বেকার বসে থেকে? শোনো সামনের মাসে একটা চাকরির ইন্টারভিউ আছে, সেখানে গিয়ে তুমি ইন্টারভিউ দিবা।
- আচ্ছা।
- শুধু আচ্ছা? যাবা কি না বলো?
- হুম যাবো।
- উফফ, আমার যা খুশি লাগছে না। তোমার চাকরিটা হয়ে গেলেই আমরা বিয়ে করে ফেলব।
- আমরা যদি এখন বিয়ে করি তাহলে সমস্যা কি?
- শোনো, বাবা কোনোদিন আমাকে কোনো বেকার ছেলের হাতে তুলে দিবেন না। আর আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না তা আগেই আমি বাবাকে বলে দিয়েছি।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
- আর শোনো বিকেল বেলা দেখা করো, ঘুরতে বের হবো আজকে।
- ঠিক আছে বিকেল ৪ টায় পার্কের সামনে থেকো।
- আচ্ছা প্রিয়।
তারপর ফোন রেখে আমি হাসিবুল ইসলাম ফাহাদের প্রথম বই "উইজার্ড রিবর্ন" নিয়ে পড়তে বসি। বইটা পড়া সবেমাত্র শুরু করেছি তখনই আমার রুমে প্রতিবেশী মেয়েটির আগমন। মেয়েটি এসেই আমাকে বলল,"আপনার আম্মুর কাছ থেকে শোনলাম আপনি নাকি অনেক বই পড়েন। তাই উনি আমাকে আপনার রুম দেখিয়ে দিলেন। আর বললেন যে আপনার পারমিশন ছাড়া নাকি আপনার লাইব্রেরিতে যাওয়া যাবে না। তাই দেখতে আসলাম আপনার কালেকশনে কি কি বই আছে।"
আমি খানিকের জন্য যেন অবাক হয়ে গিয়েছিলাম মেয়েটির কথা শুনে। তারপর নিজেকে সামলিয়ে উনাকে আমার সাথে আসতে বলি। তারপর উনাকে নিয়ে আমার নিজস্ব লাইব্রেরিতে যাই। মেয়েটি লাইব্রেরিতে ডুকে আমার নাম জিজ্ঞেস করল।
- সুপ্রিয়, আপনার?
- অন্তি, তা আপনি কি বই পছন্দ করেন।
- থ্রিলার,ভৌতিক আর খুন।
- খুন! কেন আপনি খুনি নাকি?
- খুনি না হলে কি খুনের গল্প পড়া যায় না?
- না তা যাবে না কেন। আচ্ছা আপনার লাইব্রেরিটা ঘুরে দেখতে পারি?
- না। আমার লাইব্রেরিতে আসার পারমিশন আছে তবে আমার বইগুলা স্পর্শ করার নয়।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
এই বলে অন্তিকে নিয়ে আমি বেরিয়ে আসি। তারপর হাটঁতে হাটঁতে ওর সাথে কথা বলতে থাকি। জানতে পারি গতকাল যে লোক আর মহিলাকে দেখেছিলাম তারা অন্তির বাবা-মা। তাদের একমাত্র মেয়ে অন্তি। তাদের তিনজনের একটা ছোট্ট পরিবার। আমি জানাই যে তাদের মত আমাদের পরিবারেও আমরা তিনজনই থাকি। আব্বু বিদেশে এবং আম্মুকে নিয়ে আমি এখানে একা থাকি। এভাবে কথা বলতে বলতে অন্তিকে নিয়ে ছাদে চলে এলাম। তারপর ওর কেমন বই পছন্দ জানতে চাইলে সে বলল,"আমার সব ধরনের বইই পছন্দ। তার মাঝে রোমান্টিক আর থ্রিলার গল্পই পড়া হয় বেশি।"
তারপর আমাদের কথা বলা চলতে থাকল। এভাবে কথা বলতে দুপুর হয়ে গেল। তখন আম্মু আমাদেরকে খাবারের জন্য ডাক দিলেন। কিন্তু অন্তিকে অনেক জোর করায় ও সে খেতে চায় নি, অন্যদিন আসবে বলে চলে গিয়েছে। তারপর আমি আর আম্মু দুজন খেতে বসি। তখন আম্মু বলেন,"মেয়েটাকে তোর কেমন লেগেছে?" "হুম অনেক মিশুক প্রকৃতির। সেও থ্রিলার গল্প পছন্দ করে," আমি খেতে খেতে বললাম।
- তাইলে ওর বাবা মার সাথে কথা বলে দেখব?
- কি বিষয়ে?
- তোদের বিয়ের বিষয়ে।
- আম্মু তোমাকে আমি আগেও বলেছি আমি নুরকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করব না।
এখানে বলে রাখি আমার প্রেয়সী মানে যাকে আমি ভালোবাসি তার নাম হচ্ছে নূর। আমরা একসাথেই কলেজে পড়তাম। তখন থেকেই সে আমার বাসায় আসত। কিন্তু সে কোনোকালেই আম্মুর পছন্দের ছিল না। ওকে ভালোবাসি কথাটা আম্মু জানার পর নূরকে বাসায় নিয়ে আসতেও না করে দিয়েছেন। নূরকে অপছন্দের কারন হচ্ছে নূরের অতি মাত্রায় উচ্চস্বরে কথা বলা আর অতিরিক্ত রাগ দেখানো। আম্মু যে ওকে অপছন্দ করেন তা নূর এখনো জানে না। আর তাই ওকে বলিও নি যে বাসায় ওর কথা বলে দিয়েছি ইতিমধ্যেই।
- কিন্তু বাবা তুই ওই নুরকে বিয়ে করে সুখি হতে পারবি না।
আমি আর কিছু না বলে খাবার ছেড়ে উঠে গেলাম। তারপর হাত ধুয়ে নিজের রুমে চলে আসলাম। পিছন থেকে আম্মু অনেকবার ডেকেছেন তবুও একবার আমি পিছনে ফিরে তাকাই নি। রুমে এসে দেখলাম বিকাল ৩ টা বাজে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিলাম। আজকে প্রেয়সীর সাথে দেখা হবে বলে কথা। প্রেয়সীর দেওয়া ঘড়িটা হাতে পড়ে নিলাম। তারপর বাসা থেকে বের হয়ে গেলাম প্রেয়সীর সাথে দেখা করব বলে।

চলবে।
(নাইস নেক্সট না লিখে গঠনমূলক মন্তব্য করবেন)
আর আমার যেকোনো গল্পের মতামত জানাতে, ফেসবুক গ্রুপে জয়েন দিন: https://web.facebook.com/groups/1512198808952413/

No comments:

Post a Comment