নাস্তিকতা ছেড়ে ইসলামের পথে এলেন এক বাংলাদেশী নারী।
অনেকদিন আগের কথা, আমি নিউজফিড স্ক্রল করছিলাম। হঠাৎ আমার সামনে একটি ছবি আসে। ছবিটি ছিলো একটি মেয়ের অর্ধ উলঙ্গ ছবি। আমি মেয়েটির প্রোফাইলে ঢুকে দেখি প্রায় সব ছবি-ই এমন। তো আমি উনাকে নক করে বললাম,
- আসসালামু আলাইকুম আপু, আশা করি ভালো আছেন। আপু আপনার প্রোফাইলের নামটি যদি সঠিক হয় তবে আপনি মুসলিম। তা আপু, ইসলামে কিন্তু পর্দা ফরজ করা হয়েছে। আপনি দেখতে মাশা আল্লাহ, কিন্তু আপনার ছবিতে আপনার অঙ্গগুলো দেখা যাচ্ছে। কিছু মনে করবেন না আপু, জিনিসগুলো আসলে বাজে দেখাচ্ছে।
উনি এক ঘণ্টা পর আমার মেসেজ সিন করলেন। পুরো মেসেজটি পড়ার পর আমার মেসেজে একটি এংরি(রাগী) রিয়েক্ট দিলেন। তারপর রিপ্লাই করলেন,
- এটা আপনার চোখের সমস্যা। ইসলামে কিন্তু ছেলেদের চোখকেও নামিয়ে রাখতে বলা হয়েছে। আর ভাইয়া, আপনি একজন লেখক। আপনার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করি নি। আমি আপনার গল্প পড়ি, খুব ভালো লিখেন। কিন্তু আপনার মানসিকতা নিচু। আপনাকে তো কেউ আমার ছবি দেখতে বলে নি। আর হ্যাঁ শুনেন, আমি এমনি। আমাকে এসব পর্দা টর্দার আলাপ দেখাবেন না। আমি নাস্তিক। আমি আমার শরীর কাকে দেখাবো, না দেখাবো না সেটা আমার বিষয়। আমি কখনো এই বালের পর্দা করবো না। এত সুন্দর চেহারা কি ডেকে রাখার জন্যে? আপনার ভালো না লাগলে ইগনোর করুন। আর নাহলে আনফ্রেন্ড করে দিন। আর শুনুন ভাইয়া, একজন লেখক হওয়ার আগে মন মানসিকতা চেঞ্জ করুন।
- জ্বী, আমি মাথায় রাখবো এটা।
তারপর আমি আপুটাকে আনফ্রেন্ড করে দিলাম। পাঁচ মিনিট যেতে না যেতে-ই উনি মেসেজ দিলেন,
- ছি! ম্যান। You are so disgusting. আপনি আমাকে আনফ্রেন্ড মেরে দিলেন! ছি!
- দেখো আপু, আমি একটা ছেলে। তুমি আজেবাজে ছবি দিবা, তাও পাবলিক করে, সেটা তো আমার নজরে পড়বেই। আমি তো আর তোমার বাসায় গিয়ে তোমাকে দেখছি না। আর মানসিকতা নিচু যখন, আমি এটা নিয়ে-ই খুশি। ধন্যবাদ।
এরপর আমাদের আর কথা হয় নি। এর দু মাস পর শুরু হয় করোনা। চারিদিকে লকডাউনের ছড়াছড়ি। লকডাউন খোলার পর যখন সবকিছু প্রায় শান্ত হয়ে যায়, আমি আমার ব্যক্তিগত একটা কাজে ঢাকার সেন্ট্রাল হসপিটালে যাই। কাজ শেষ করে সেখানের ক্যাফে তে বসেছিলাম কফি খাওয়ার জন্য। হঠাৎ এক মেয়ে এসে আমাকে বলে,
- আরে সালমান ভাই আপনি! আপনি এখানে কীভাবে?
মেয়েটির মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস, এবং সম্পূর্ণ শরীর ঢাকা। আমি মেয়েটির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলাম,
- আপনি...?
- আরে আমি নীরা। এখানে আসছিলাম ডাক্তার দেখাতে। আমি তো আপনার গল্প পড়তাম আগে। মনে নেই?
আমার একটু পর-ই তার কথা মনে পড়ে। আমি হাসি দিয়ে বলি,
- আরে আপনি! বসেন বসেন।
মেয়েটি বসলে আমি তাকে বললাম,
- তা আপু, এই মাস্ক গ্লাভস?
- আরে বইলেন না, ঢাকায় করোনার যা অবস্থা।
- ভয় পাচ্ছেন নাকি?
- এ মা, ভয় পাবো না? করোনায় ধরলে যদি মরে যাই!
- ওহ! এইজন্যে-ই সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে রাখছেন।
- হ্যাঁ, কত মানুষ যে মরছে দিনদিন।
- আচ্ছা আপু, একটা কথা বলি। আপনার সাথে আমার যখন প্রথম কথা হয়, আপনি বলেছিলেন আপনি নাস্তিক। আর কখনো আপনি পর্দা করবেন না। হাহা, তা আপু আপনি সামান্য একটা ভাইরাসের ভয়ে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে রাখছেন আজ। কিছু বুঝলেন?
মেয়েটি লজ্জা পেয়ে বললো,
- কি বুঝবো?
- একটা সামান্য ভাইরাস যদি এত ভয়ানক হতে পারে, তবে আল্লাহ কতটা ভয়ানক? আপনি একটা ভাইরাসকে ভয় পান, আর আল্লাহ-কে ভয় পান না? যে আপনাকে সৃষ্টি করেছে, আপনি তাকে ভয় পান না। জানেন, আল্লাহকে যারা ভয় করে, যারা উনার কথামত চলে, তাদের আল্লাহ ভালোবাসেন। এমনকি, আপনি যদি এই মুর্হুর্তে আল্লাহ'র কাছে মাফ চান, আল্লাহ হয়ত আপনাকে মাফ করে দিবেন। কারণ, উনি কাউকে-ই ফিরিয়ে দেন না।
- হুহ, আমি যে পাপ করছি। উনি আমাকে মাফ করবেন না।
- একবার মাফ চেয়ে-ই দেখুন, যখন মনে হবে মনের মধ্যে শান্তি পাচ্ছেন মাফ চাওয়ার পর। বুঝে নিবেন আল্লাহ ক্ষমা করেছেন। আজ উঠি, অন্যদিন দেখা হলে কথা হবে।
এই বলে আমি সেদিন চলে এসেছিলাম। কিছুদিন আগের নাস্তিক মেয়েটি আমাকে আবারো রিকুয়েষ্ট দিয়েছিলো। আজ মেয়েটি একজন পাক্কা মুসলমান।
গল্প: ইসলামাবাদ।
লিখায়: সালমান চৌধুরী সুপ্রিয়।
No comments